1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

শোভন মণ্ডল : সাহিত্য চেতনা

       


    

  নির্জন পার্ক

   • শোভন মণ্ডল

       ***



   পার্কটা বেশ নির্জন। ঊর্মি দু'দিন ছাড়া এখানে আসে। ঝিলের ধারে এই বেঞ্চটা তার খুব পছন্দ। লোকজন খুব একটা এদিকে দেখা যায় না। অনেকগুলো ফুলগাছ জায়গাটাকে আড়াল করে রেখেছে।

অন্যদিনের মতো ঊর্মি এখানে এসে বসলো। ব্যাগটা পাশে রেখে রুমালটা বের করে ভালো করে মুখ মুছলো। ঢকঢক করে বোতল থেকে জল খেল খানিকটা। তারপর যথারীতি কালো ব্যাগটা থেকে ল্যাপটপটা বের করে কোলের ওপর রাখলো। খটখট করে টাইপ করতে লাগলো। আসলে সে একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। বিভিন্ন আর্টিকেল লিখে সংবাদপত্রে মেল করে পাঠায়। এই পার্কের বেঞ্চটাই তার কাজের ডেস্ক হয়ে উঠেছে বেশ কিছুদিন। অনেকক্ষণ কাজ করার পর ল্যাপটপটা মুড়ে রেখে একটু আড়মোড়া ভাঙলো সে।

বেলা পড়ে এসেছে। তবে বিকেলের আলো এখনও ঝিলের ওপরে খেলা করছে। এইসময়ই একটা বৃদ্ধ লোক লাঠি হাতে বেঞ্চির কাছে এসে ইতস্তত করছিল বসার জন্য। ঊর্মি ব্যাগদুটো আর জলের বোতলটা নিজের দিকে সরিয়ে নিয়ে কিছুটা জায়গা করে দিল। বৃদ্ধমানুষটিকে তবুও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঊর্মি মৃদু হেসে বললো,  বসতে পারেন।

বৃদ্ধ বসলেন। দু'চোখে প্রশান্তির ছাপ স্পষ্ট।

খুব স্টাইলে বললেন, থ্যাঙ্ক ইউ মাই সান ।

ঊর্মি কোনো কথা বললো না। আবার ল্যাপটপ খুলে কাজ শুরু করলো। আলো কমে যাবার আগেই লেখাটা শেষ করতে হবে তার।

অনেকক্ষণ কাজে মগ্ন থাকার পর বৃদ্ধের একটি কথায় তাল কাটলো ঊর্মির।

–তোমার নাম কী মা?

–ঊর্মি

–তোমার অসুবিধা হচ্ছেনা তো? 

–এ মা,  অসুবিধা হবে কেন? অবাক হয়ে বললো ঊর্মি।

–আসলে জানো তো মা, আগে এখানে প্রায়ই আসতাম। আমার স্ত্রী আর আমি এই বেঞ্চিটাতে এসেই বসতাম। উনি চলে যাবার পর আর আসিনা। তবে বছরে এই একটি দিন...

বলে বৃদ্ধ যেন চোখ মুছলেন। ঊর্মি কাজের কথা ভুলেই গেছে।

–কোন দিন...?  মুখ ফুটে প্রশ্নটা করেই ফেললো।

–আজকে দিনটা আসলে আমাদের বিবাহবার্ষিকী। ও যখন বেঁচে ছিল এই দিনটায় আমরা এখানে বসে কেক কাটতাম।

এই বলে ব্যাগ থেকে একটা কেক বের করলেন তিনি।

–গত পাঁচ বছর ধরে আমি একাই কেক কাটছি।

চোখ চকচক করছিল জলে। রুমাল দিয়ে মুছলেন বৃদ্ধ।

ঘটনাটা নাড়া দিয়েছে ঊর্মির।

ল্যাপটপ বন্ধ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছে।

বুড়োমানুষটা একটা মোমবাতি জ্বেলে ছুরি বের করে কেকটা কাটলেন।

ঊর্মি হাঁ হয়ে গেছিল। চোখের পলক পড়ছিল না। মনে হচ্ছিল যেন দারুণ চিত্রনাট্যের কোন সিনেমা দেখছে সে। 

কেকের কিছুটা অংশ ছুরি দিয়ে তুলে ঊর্মির দিকে এগিয়ে দিলেন।

ঊর্মি ইতস্তত করছিল। কিন্তু বৃদ্ধ দুঃখ পাবে ভেবে কেকটা নিয়ে পাশে কাগজের প্যাকেটের ওপরে রাখলো।

–খেয়ে নাও মা।

অনুনয় করলেন বৃদ্ধ।

– একটু পরে খাচ্ছি। আপনি খেলেন না? 

 – বাড়ি গিয়ে স্ত্রীর ছবিতে আগে ছোঁয়াবো তারপর খাবো। তুমি খেয়ে নাও কেকটা। 

ঊর্মির আসলে কিছু খেতে ইচ্ছে করছিল না। আবার বললো,  পরে খাচ্ছি।

বৃদ্ধ মানুষটা সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে উঠে পড়লেন। সন্ধে তখন গড়িয়ে গিয়েছে। পার্কের আলোগুলো পটাপট জ্বলে যাচ্ছে। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে লাঠি হাতে ঠকঠক করতে করতে মানুষটা যেন খুব দ্রুত অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

কিছুক্ষণ যাওয়ার পর হঠাৎ ঊর্মির খেয়াল হলো বৃদ্ধের দেওয়া কেকটা বেঞ্চির পিছনের ফাঁক দিয়ে নিচে ঘাসের ওপর পড়ে গেছে। একটা বাদামি আর একটা কালো কুকুর নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে খাচ্ছে।


মনে মনে কষ্ট পেল। ইস্ !  কত ভালোবেসে তৈরি করা কেক। এভাবে নষ্ট হলো!  তখনই খেয়ে নিলেই ভালো হতো।

মিনিট পনেরো পর সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়াল ঊর্মি।

তারপর পিছন দিকে তাকাতেই হাড় হিম হয়ে গেল তার। 

কালো কুকুরটা নিথর হয়ে উলটে পড়ে আছে। আর বাদামি কুকুরটা ছটপট করে কাতরাচ্ছে। তার গালে এখনো কেকের টুকরো লেগে আছে।

দৌড় লাগালো ঊর্মি।



Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন